উপকারিতাঃ ঝুরা ক্রিমির ঔষুধ হিসাবে এটি ভাল কাজ করে জ্বর ও কাশি হলে পিপুল গরম পানির সাথে সকাল ও বিকালে খেলে জ্বর ও কাশি কমে যায় হাঁপানি রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী
পিপুল মূল ও পিপুলের ন্যায় গুনকারক। পিপুল চূর্ণ মধুসহ সেবনে মেদরোগ, কফ, শ্বাস, কাস ও জ্বর নিবারিত হয় এবং বল, মেধা ও অগ্নি বর্ধিত হয়। ইক্ষু গুড় ২ ভাগ এবং পিপুল ১ ভাগ, উভয়ে মিশ্রিত করে নিয়মিত সেবনে জীর্নজ্বর, অগ্নিমান্দ্য, কাশ, অজীর্ণ, অরুচি, শ্বাস, হৃদরোগ, পাণর্ড ও ক্রিমি নষ্ট হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, আন্ত্রিক ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, মস্তিষ্কেও টিউমার, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে পিপুল কার্যকর। পিপুলের মধ্যে পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক যৌগ থাকায় তা এসব ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও আরও যেসব রাসায়নিক উপাদান পিপুলে রয়েছে সেগুলো হলো পিপারিন, পিপলারটাইন, পিপারনোলিন, লং এমাইড, পিপারলংগিন, পিপারসাইড, পেল্লিটোরিন, বিভিন্ন এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি। শিকড়ে রয়েছে পিপারিন, স্টেরয়েডস, গ্লুকোসাইডস, পিপেলারটিন ও পিপারলংগুমিনাইন নামক রাসায়নিক উপাদান।
হৃদরোগে পিপুল : সমপরিমাণ পিপুল মূল ও দারচিনি একসাথে বেঁটে মিহি গুঁড়া করতে হবে। তারপর তা ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে রোজ দুইবার খেতে হবে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হৃদরোগের উপশম হয়। সমপরিমাণ শুকনো পিপুল মূল ও লেবুর গাছের শিকড়ের বাকল একসাথে বেঁটে গুঁড়া বানাতে হবে। রাতে ১ কাপ জলে অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই অর্জুনের ক্বাথের সাথে এই চূর্ণ মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। এতে হৃৎপিণ্ডের ব্যথা থাকলে তাও সেরে যায়। পিপুলের শুকনা অপরিপক্ক ফল বল বৃদ্ধিকারক ও টনিক হিসাবে, অপরিপক্ক ফুল এবং মূলের ক্বাথ পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস, কাশি এবং ঠান্ডাজনিত রোগের জন্য উপকারী।
হাঁপানি: যাদের হাঁপানির কষ্ট হয়, তাদের উচিত খাওয়ার পর ২৫০ মি.লি পানিসহ পিপু গুঁড়া খাওয়া। এতে হজমও ভালো হবে এবং হাঁপানির কষ্টও হবে না। কাশির সাথে যদি জ্বর থাকে, তবে ক্ষয়রোগের আশঙ্কা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা শুরু করার আগে ২৫০ মি.গ্রা. পিপুল গুঁড়া কুসুম গরম পানিসহ সকাল-বিকাল খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।
নিদ্রাহীনতা দূর করে : রাত গভীর হচ্ছে অথচ কিছুতেই ঘুম আসছে না। এ অবস্থাটা আসলে অসহ্য। একে বলে নিদ্রহীনতা। এ অবস্থা হলে পিপুলের শরণাপন্ন হতে হবে। পিপুলের ১-৩ গ্রাম শিকড় সামান্য চিনি সহকারে ছেঁচে বা বেঁটে সেই রস ছেঁকে দিনে দুবার সকাল বিকেলে খেতে হবে। বয়স্ক লোকদের এই রস সেবনে বিশেষ উপকার হয়। চিনির বদলে আখের গুড়ও ব্যবহার করা যায়। এতে হজমও ভালো হয়।
জ্বর সারায়: যে জ্বরে রক্তের বল কমে যাচ্ছে, শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে, চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ছে, চোখ ফ্যাকাসে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে, অথচ জ্বর সারছে না। সেক্ষেত্রে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ ৫/১০ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে রোজ খেলে কয়েক দিনের মধ্যে এই জীর্ণ জ্বর সেরে যাবে।
মেদ কমায়: যারা মোটা ও মেদস্বী তারা মেদ কমাতে চাইলে রোজ খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ১ কাপ হালকা গরম জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে তাতে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। দিনে দুইবার খাওয়া যায়। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে মেদ কমবে। এ সময় কোনো চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না ও একবেলা ভাত ও দুইবেলা রুটি খেতে হবে। এটা খাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে কোনো শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, তবে তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে। শ্লেষ্মাপ্রধান বাতরোগে যখন শরীর স্থবির হয়ে যায়, মনে হয় শরীর অচল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ২৫০ মি.গ্রা. পিপুল গুঁড়া ১ চামচ গরম আদার রসসহ সকাল-বিকাল দুইবার খেলে উপশম হবে। তবে এতে শরীর কড়া হলে একবার ব্যবহার করতে হবে।
কৃমি কমায়: শিশু বৃদ্ধ যারই গুঁড়া বা ঝুড়ো কৃমি হোক তাদের উচিত রোজ সকাল-বিকেল ১ কাপ বাসি জলে ২৫০ মিলিগ্রাম পিপুল চূর্ণ গুলে খাওয়া। এতে কৃমির উপদ্রব কমবে।
মাথাব্যথা কমায়: মাথা ব্যথা হলে তা সারানোর সবচেয়ে সহজ ওষুধ হলো পিপুল ফল বেঁটে মলমের মতো করে কপালে লেপে দেয়া। এতে দ্রুত মাথাব্যথা কমে। এছাড়া পিপুল, গোলমরিচ ও আদা একসাথে জলের সাথে বেঁটে ছেঁকে সেই রস রোগীকে খাওয়ানো। এতেও মাথাব্যথার উপশম হয়।
কাশি সারে: খুসখুসে কাশি আর ঘুষঘুষে জ্বর। এটা যক্ষ্মা রোগের পূর্ব লক্ষণ। এরূপ অবস্থা হলে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও পরীক্ষা করাতে হবে। তবে তার আগে পিপুলচূর্ণ ২৫০ মিলিলিটার সামান্য গরম জলে গুলে সকাল-বিকেল অর্থাৎ দিনে দুইবার খেতে হবে। এভাবে ৪-৫ দিন খাওয়ার পর সেটা চলে যেতে পারে। যদি না যায়, তখন অবশ্যই যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা করাতে হবে।